ব্রাজিলের শ্রমবাজার উন্মুক্ত হচ্ছে বিদেশীদের জন্য ।


মাত্র ২১ মাস আগে যখন আমি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের পদ গ্রহণ করি, তখন দেশটি তার ইতিহাসের ভয়াবহতম অর্থনৈতিক সংকট এবং জনগণের ওপর এর সামাজিক প্রভাবে ঘোর সংকটকাল অতিবাহিত করছিল। এমন সংকটের মুখোমুখি হয়ে আমি জনগণের আস্থা অর্জনের আগেই পরিবর্তনের রৃপরেখা পেশ করলাম। রৃপরেখাটি গত ৩০ বছর ধরে চলা রাজস্ব ভারসাম্য স্তম্ভ, সামাজিক দায়িত্ব এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে গঠিত। 

এর ফলাফল ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান। ব্রাজিল এই অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠছে এবং শেষ দুটি ত্রৈমাসিকে পরপর ব্রাজিলের অর্থনীতি লক্ষণীয়ভাবে উন্নতি করেছে। কিছু বিশেল্গষক ২০১৭ সালে জিডিপিতে ১ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছেন। ২০১৬ সালের মে মাসে মুদ্রাস্টম্ফীতি যেখানে ছিল ১০ শতাংশ, তা লক্ষ্যমাত্রার নিচে এসে দাঁড়িয়ে সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে লিপিবদ্ধ হয় ২.৫৪ শতাংশ। প্রকৃতভাবে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে ৬ শতাংশ মজুরি বেড়েছে। মে মাসের জন্য সুদহার ছিল ১৪.২৫ শতাংশ এবং এটা একটি টেকসই পদ্ধতিতে কমানো হয়েছে। সেলিক (SELIC) হার বর্তমানে ৭.৫ শতাংশ, যা চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং ব্যাংকের ব্যাপ্তি যথেষ্ট কমানো হয়েছে। এই সুদহার কমার ফলে জনগণের কোষাগারে অতিরিক্ত ৮০ বিলিয়ন রিয়েল (১৮.৫ বিলিয়ন পাউন্ড) যোগ হয়। 

আমাদের বাণিজ্য ভারসাম্য অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ব্রাজিল জানুয়ারি ও অক্টোবর ২০১৭-এ ৫৮.৪৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য উদ্বৃত্তিতে পৌঁছেছে (২০১৬ সালের একই সময়ের তুলনায় ৫১.৮ শতাংশ বেশি)। একই সময়ের তুলনায় শিল্প উৎপাদন ১.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে (মে ২০১৬ সালে এটির ৯.৮ শতাংশ পতন হয়েছিল)। ২০১৬ সালে গাড়ি রফতানি ৫৫.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০১৭ সালে মোট উৎপাদন ইতিমধ্যে পৌঁছেছে ৫৬০ হাজার ইউনিটে। 

২০১৬ সালের তুলনায় অভ্যন্তরীণ বাজারে নতুন গাড়ি বিক্রির পরিমাণ ৯.২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রাজিলের ফসল উৎপাদন ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৪২ মিলিয়ন টনে উন্নীত হয়েছে, যা গত ২০১৬ সালের তুলনায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রাজিলীয় অর্থনীতির উত্তরণের প্রতিফলন হিসেবে, ২০১৭ সালে নৌবন্দর ব্যবহার ৫.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ বিমান পরিবহন সেপ্টেম্বর ২০১৬-এর তুলনায় ৬.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

ব্রাজিলের অর্থনীতির বিশ্বাস পুনরুদ্ধারের মূলে রয়েছে এই সুনীতিসম্পন্ন চক্র। বিজনেস কনফিডেন্স ইনডেক্স ৯০.৩ পয়েন্টে পৌঁছেছে, যা ২০১৪ সালের জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ। ব্রাজিলে ঝুঁকি (এমারজিং মার্কেট বন্ড ইনডেক্স-ইএমবিআই) ৫৪৪ বেস পয়েন্ট (জানুয়ারি ২০১৬) থেকে ২৩৯ বেস পয়েন্টে নেমেছে (অক্টোবর ২০১৭), যা কার্যকরী বিস্তার থেকে ৫৬.১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এ ছাড়াও পাঁচ বছরের ৩২৮ বেস পয়েন্টে থাকা ক্রেডিট ডিফল্ট সোয়াপটি বর্তমান সময়ে ১৭৩.৫-তে নেমে এসেছে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে আইবিওভিএসপিএ সূচক ৭৬ হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করেছে, যা ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৩৮ হাজার পয়েন্ট। ২০১৭ সালের প্রথম সেমিস্টারে মোট সমীক্ষার পরিমাণ ৪০.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০১৬ সালে ৭৮.৯ মার্কিন ডলার)। প্রি-সল্ট নতুন নিয়ন্ত্রক মডেলের অধীনে অনুষ্ঠিত শক্তি নিলামগুলো, ২২ বিলিয়ন রিয়েলে (প্রায় ৫.১ বিলিয়ন পাউন্ড স্টার্লিং) উত্থিত হয়েছে। শুধু জ্বালানি খাতে, পরবর্তী কয়েক বছরে ৪৪৪ বিলিয়ন রিয়েল (১০২.৯ বিলিয়ন পাউন্ড স্টার্লিং) বিনিয়োগ আশা করা হচ্ছে, যা ৫০০ হাজার নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি করবে। 

অর্থনৈতিক যুক্তিযুক্ততা এবং পূর্বাভাসের ব্যবস্থাগুলো ব্যবসার পরিবেশকে উন্নত করেছে। ফলে কৃষি, সেবা, খুচরা ও বিদেশি বাণিজ্য খাতে উদ্যোগের মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসন হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ দায়বদ্ধতা আইন রাষ্ট্র উদ্যোগের পেশাদারিত্ব আনয়নে সক্ষম হয়েছে। অতীতে নিন্দিত হলেও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ এখন ফিরে পাচ্ছে তার মর্যাদা। ২০১৫ সালে ৩২ বিলিয়ন রিয়েল ক্ষতি (৭.৪ বিলিয়ন পাউন্ড স্টার্লিং) ২০১৬ সালে ৪.৬ বিলিয়ন রিয়েল (০.২ বিলিয়ন পাউন্ড স্টার্লিং) লাভে গিয়ে দাঁড়ায় এবং ২০১৭ সালের প্রথমার্ধে লাভ গিয়ে দাঁড়ায় ১৭.৩ বিলিয়ন রিয়েল (৪ বিলিয়ন পাউন্ড স্টার্লিং)। উৎপাদনশীলতাকে লক্ষ্য বানিয়ে একটি কর্মসংস্থান সংশোধন পাস করা হয়েছে। অধিকার পরিবর্তন না করেই আইনের আধুনিকায়ন করা হয়েছে এবং শ্রমিকদের কালো বাজার অর্থনীতি থেকে আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানে আনা হয়েছে। 

এই কর্মসূচির সাফল্য ইতিমধ্যে কর্মসংস্থান পুনরুদ্ধারের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে কর্মসংস্থান সূচক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে। কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাধারণ রেজিস্ট্রারের (ক্যাগেড-এমটিই) পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানুয়ারি ও মে ২০১৬-এর মধ্যে ৪৪৮ হাজার ছাঁটাইয়ের তুলনায় ২০১৭ সালে ১৬৩ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ব্রাজিলের ভূগোল ও পরিসংখ্যানের (আইবিজিএ) পরিমাপের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ব্রাজিলে ১,০৬১ মিলিয়নেরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এবং ৫২৪ হাজারেরও বেশি লোকের মধ্যে বেকার সংখ্যা রদ করা হয়েছে। ২০১৬ সালের একই সময়ের তুলনায় ২০১৭ সালের তৃতীয় কোয়ার্টারে কর্মচারী বাস্তব গড় আয় ৩.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ আর্থিক দায়বদ্ধতার পুনর্বহাল সামাজিক কল্যাণে বরাদ্দকৃত সম্পদ বৃদ্ধি করেছে। সামাজিক কল্যাণ কর্মসূচি, যা আগে রাজস্ব পতনের কারণে ঝুঁকির মুখে পড়েছিল, সংবিধানের অধীনে জনকল্যাণকর কাজে খরচে দক্ষতার কারণে তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে। বলসা ফিমিলিয়া কার্যক্রমের উপকারিতা বাড়িয়ে ১২.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে (দুই বছরের বেশি সময় পর কোনো সমন্বয় ছাড়াই) এবং অপেক্ষমাণ তালিকাগুলো নিঃশেষ হয়ে গেছে। সরকার আরও অগ্রসর হয়েছে এবং প্রোগ্রেডির (এগিয়ে যাওয়া) প্রোগ্রাম চালু করেছে, যা কর্মসংস্থান ও ঋণ গ্রহণের জন্য পরিবারকে সুবিধার জন্য সহায়তা করে এবং যেমন স্বায়ত্তশাসন অর্জনের জন্য। আমি সাহসিকতার সঙ্গে অপ্রচলিত FGTS অ্যাকাউন্ট চালু করেছি এবং PIS-PASEP তোলার উন্নতি করেছি, যা লাখ লাখ ব্রাজিলিয়ানের উপকার করে এবং ৬০ বিলিয়ন রিয়েল অর্থনীতির মধ্যে অনুপ্রবেশ করে। 

স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতে বাজেট বেড়েছে। স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার যৌক্তিকীকরণ অপরিহার্য পরিসেবাগুলোর জন্য আরও সম্পদ নিয়ে এসেছে। ৪ বিলিয়ন রিয়েল সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য পুনর্নির্দেশ, নতুন স্বাস্থ্যসেবা ইউনিট খোলা এবং নতুন কর্মীদের নিয়োগের জন্য ব্যয় করা হয়েছে। ফার্মাসিয়া পপুলার (কম খরচে ফার্মেসি) কার্যক্রম প্রশাসনের খরচের ৮০ শতাংশ বাজেট ব্যয় করেছে। একটি নতুন বরাদ্দকরণ ব্যবস্থা ১০০ মিলিয়ন রিয়েল/বছর দ্বারা অপরিহার্য ওষুধ কেনার জন্য সম্পদ বৃদ্ধি করেছে শিক্ষার ক্ষেত্রে উচ্চ মাধ্যমিক-মাধ্যমিক সংস্কার শিক্ষার্থীদের জন্য স্বতন্ত্র দক্ষতা এবং কর্মসংস্থানের বাজারের বাস্তবায়নের জন্য পাঠ্যক্রম হালনাগাদ করেছে। শিক্ষার্থী অর্থায়ন তহবিল (FIES) ৭৫ হাজার নতুন গবেষণা স্থান প্রদানের পুনর্স্বাক্ষর করা হয়েছে এবং যা এই খাতকে আরও শক্তিশালী করেছে। একইভাবে সম্পদ স্থানান্তরের মধ্যে বিলম্ব এড়ানোর মাধ্যমে আরও ৭০০ মিলিয়ন রিয়েল এই তহবিল বরাদ্দ করা হয়। জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট চালু হওয়ার পর, ব্রাজিলের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট প্রবেশের সার্বজনীনকরণের পথে একটি দৃঢ় পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। 

ফলাফল দেখা যায়, সরকার দ্বারা পরিচালিত এবং বাস্তবায়িত কৌশলটি ছিল সঠিক এক কৌশল। আমরা অর্থনৈতিক সংকটকে ত্যাগ করে উন্নয়নের পথে ফিরে এসেছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, নষ্ট করার মতো কোনো সময় নেই। তাই সংস্কারের রৃপরেখার অনুমোদনকে ত্বরান্বিত করা হবে। পরবর্তী ধাপ হবে সংস্কারের ধারাবাহিকতা, যা সচ্ছলতা এবং বেঁচে থাকা নিশ্চিত করবে অগ্রাধিকার ছাড়াও। ট্যাক্স আইন সহজিকরণ, অন্যান্য অগ্রাধিকার, আমাদের দেশীয় উৎপাদনের প্রতিযোগিতামূলক বৃদ্ধি করবে। ন্যাশনাল কংগ্রেস, শ্রমিক এবং ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের অপরিহার্য সমর্থন নিয়ে আমরা ব্রাজিলকে উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছি।

২০১৯ সালের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে ব্রাজিলের শ্রমিকদের পাশা পাশি বিদেশী শ্রমিকরাও কাজ করবেন। বর্তমানে ব্রাজিলে প্রচুর বিদেশি নাগরিক কাজ করছে । আমরা আশা করি সামনে এদেশের বেকারত্ব কমিয়ে বিদেশ থেকে শ্রমিক আনবো ।ব্রাজিল হবে পৃথিবীর ধনি দেশের একটি ।

প্রেসিডেন্ট, সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রী ব্রাজিল




No comments

Powered by Blogger.