কারো নির্দেশের অপেক্ষায় নয়, নিজেই নেতৃত্ব গ্রহণ করুন: তারেক রহমান

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন- কারো নির্দেশের অপেক্ষায় নয়, আপনি নিজেই নেতৃত্ব গ্রহণ করুন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, আপনার সামনের নেতাকে গ্রেফতার করলে আপনি আপনারা এলাকায় বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্দোলনকে গতি দেয়ার জন্য নিজেই নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সামনে এগিয়ে যান। শহীদ জিয়ার সৈনিক হিসেবে পরিস্থিতি বুঝেই সিদ্ধান্ত নিন।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, দেশ ও স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ১৯৭১ সালে কারো নির্দেশের অপেক্ষা না করে যেভাবে শহীদ জিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁর সৈনিক হিসেবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলনের লড়াইয়ে আপনিও পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন।
তিনি বলেন, শুধু মনে রাখবেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই লড়াইয়ে আমাদের সর্বাধিনায়ক দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সবাই ঔক্যবদ্ধ থাকুন, সাহস ও সর্তকতার সহিত প্রস্তুত থাকুন। গণতন্ত্রের বিজয় সন্মিকটে এ বছরই গণতন্ত্রের বিজয় দেখবে বাংলাদেশ।
তারেক রহমান বলেন, দেশ এখন এক সংকটকাল অতিক্রম করছে। শুধু রাজনীতি সংকট নয়- দেশে এখন মানবতা বিপন্ন। ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় সর্বত্র। সমাজের গুনীজনদের সচেতনভাবে অপমান করা হচ্ছে। দেশে চালু হয়েছে ভয়ের সংস্কৃতি।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তাদের শোকাহত পরিবারের প্রতি জানাচ্ছি শোক ও সমবেদনা। আমাদের দলের অনেক নেতা-কর্মীকে এরই মধ্যে আমরা হারিয়েছি। তাদেরকে স্মরণ করে দলীয়ভাবে শোক প্রস্তাবে আমার গভীর শ্রদ্ধা। আমি আল্লাহর কাছে তাদের মাগফেরাত কামনা করছি।
তিনি বলেন, আপনারা যানেন- আমরা যে ভেন্যুতে বসে নির্বাহী কমিটির সভা করছি এটি পেতে আমাদের অনেক কষ্ট পোহাতে হয়েছে। কারণ এখন যারা রাষ্টক্ষমতা দখল করে আছে তারা বিএনপিকে অনেক ভয় পায়। তারা জানে তাদের সঙ্গে জনগণ নেই বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্রকামী জণগণ আছে।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিতে চায়।
তারেক রহমান বলেন, অশেষ কৃতজ্ঞতা ও আনুগত্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে যিনি সকল নির্যাতন, হুমকি, ধামকি উপেক্ষা করে দেশ ও জনগণের স্বার্থে গণতন্ত্র পূনরুদ্ধারে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।
তারেক রহমান বলেন, সরকারের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে- বর্তমানে ৩০ লক্ষ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এসব লক্ষ লক্ষ মামলা রেখে বিএনপি চেয়ারপরসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার রায় দেওয়ার জন্য তড়িগড়ি করা হচ্ছে। এটি রীতিমতো উদ্বেগজনক। তারপরও বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রতি সপ্তাহে আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। এর কারণ মানুষের ভরসা সর্বশেষ আশ্রয়স্থল আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা যেন না হারায়।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, তবে আদালতের প্রতি আস্থা তৈরির দায়িত্ব শুধু বিএনপির একার নয়। বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষায় সরকারের যেমন সৎ হতে হবে, আদালতেরও দায়িত্ব বাদি-বিবাদী উভয়ের জন্য আস্থা ও নির্ভরতার জায়গা হিসেবে পরিগণিত করা। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে আদালতের আচরণ, আদালতের পতি মানুষের আস্থা বাড়েছে কিনা এই প্রশ্নটি এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, আপনারা জানেন সরকারের কিছু অগ্রাধিকার প্রকল্প থাকে। রাজনৈতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রকল্প থাকে। সরকারের ওইসব অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করে দেয়ার জন্য ঠিকাদারকে তড়িগড়ি করতে হয়। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে কোনো মূল্যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মামলার রায় ঘোষণার জন্য আদালতের দৃশ্যমান তাড়াহুড়া অনেকের কাছে প্রতিয়মান হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচারকার্যটি যেন সরকারের তেমনি কোনো অগ্রধিকার প্রকল্পের একটি অংশ।
জনমনে এই ধারনা সৃষ্টির যৌক্তিক কারণ হলো- আদালত একটি মালমাল রায় নির্ধারণ করেছে ৮ ফেব্রুয়ারি। একই সঙ্গে তারই আগে আরেকটি মামলার শুনানি শুরু করে দিয়েছে। কেনো এতো তাড়াহুড়া বিচারালয়তো কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নয়।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকার নিজেদের হীন রাজনীতি স্বার্থ চরিতার্থ করতে যেভাবে আইন-আদালতকে ইচ্ছামতো ব্যবহার করেছে- এটি আর চলতে দেওয়া সম্ভব নয়, এটি আর মেনে নেওয়া যায় না। তাই বিচারক ও বিচার বিভাগের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় বিচারককে ঠিকাদার এবং বিচারালয়কে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার আওয়ামী চক্তান্তের বিরুদ্ধে জনগণকে সাথে নিয়ে বিএনপি রুখে দাঁড়াবে ইনশাআল্লাহ।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, শুধু আইন-আদালত নয় রাষ্ট্রের সবকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে এই অবৈধ সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের নামে তামাশার কারণে জনগণের কাছে নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাস যোগ্যতা এখন শূন্যের কোটায়। শিক্ষা ব্যবস্থায় অনিয়মে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ করে দিয়েছে। স্কুলের ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নকলের ছড়াছড়ি। ক্ষমতাসীন দলের দ্বারা নারীদের অবমাননা, সময়ে সময়ে সংখ্যালগুদের উপরে নির্যাতন, দেশে ক্রমেই নিত্য-নৈমিত্তে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্র বাদ দিয়ে ক্ষমতাসীনদের মুখে কথিত উন্নয়নের গল্প বলি পাকিস্তানের আইয়ুব খানকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

No comments

Powered by Blogger.